ইবাদত

পঞ্চম শ্রেণি (প্রাথমিক) - ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা - ইবাদত | NCTB BOOK
403

'ইবাদত' শব্দের অর্থ আনুগত্য, দাসত্ব, বন্দেগি ইত্যাদি। আল্লাহ তায়ালার আনুগত্য স্বীকার করে তাঁর যাবতীয় আদেশ, নিষেধ মেনে চলাকে বলে ইবাদত। আল্লাহ আমাদের 'ইলাহ'। ইলাহ মানে মাবুদ। আর আমরা তাঁর আবদ। আবদ মানে অনুগত বান্দা। আমাদের কর্তব্য হলো আল্লাহ তায়ালা যেসব কাজ করলে খুশি হন, যা যা করতে বলেছেন তা করা, আর যা যা করতে নিষেধ করেছেন তা থেকে বিরত থাকা। আল্লাহ তায়ালার আদেশ-নিষেধ মেনে চলাই ইবাদত।

আল্লাহ তায়ালা আমাদের সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। তিনি আমাদের লালন-পালন করেন। তিনিই আমাদের রব। আমাদের জীবন-মৃত্যুর মালিকও তিনিই। তিনি এই মহাবিশ্বকে আমাদের জন্য কতো সুন্দর করে সাজিয়েছেন। আসমান-জমিন, চাঁদ-সুরুজ, ফল-ফসল, গাছ-পালা, নদী-নালা, পাহাড়-পর্বত সবকিছুই আমাদের জন্য সৃষ্টি করেছেন। তিনি সবকিছুকে আমাদের অনুগত করে দিয়েছেন। আর তিনি আমাদের সৃষ্টি করেছেন শুধু তাঁরই ইবাদতের জন্য। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন- 'আর আমি জিন ও মানবজাতিকে কেবল আমার ইবাদতের জন্যই সৃষ্টি করেছি।’ (সুরা যারিয়াত, আয়াত :৫৬)

আমাদের জন্য কতগুলো নির্ধারিত মৌলিক ইবাদত রয়েছে। যেমন- সালাত, সাওম, হজ, যাকাত, সাদাকাহ, দান-খয়রাত ও আল্লাহর পথে জিহাদ ইত্যাদি। এগুলো মহানবি (স) যেভাবে আদায় করেছেন, আমাদের যেভাবে আদায় করতে বলেছেন, আমরা ঠিক সেভাবেই আদায় করব ।

ইবাদত শুধু সালাত, সাওম ইত্যাদির মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টির জন্য রাসুল (স) এর দেখানো পথে যে কোনো ভালো কাজই ইবাদতের মধ্যে শামিল। ভালো কাজের উৎসাহ দেওয়াও ইবাদত। রাসুল (স) বলেছেন, ' যে ব্যক্তি কোনো ভালো কাজের পরামর্শ দেয়, সে ব্যক্তিও কাজটি সম্পাদনকারীর সমান পুরস্কার পাবে।' (মুসলিম)

আল্লাহ তায়ালা তাঁর ইবাদতের জন্যই আমাদের সৃষ্টি করেছেন। আমাদের সব সময়ই তাঁর ইবাদতে মশগুল থাকা কর্তব্য। প্রশ্ন উঠতে পারে, সব সময়ই কি ইবাদতে মশগুল থাকা সম্ভব? হ্যাঁ, দিন-রাত চব্বিশ ঘণ্টা ইবাদত করা সম্ভব। যেমন আমরা যদি বিসমিল্লাহ বলে হালাল খাদ্য খাই, খাওয়ার পরে শোকর করি তবে খাওয়ার সময়টুকু ইবাদতে গণ্য হবে।

পড়ার সময় বিসমিল্লাহ বলে পড়া শুরু করলে যতক্ষণ লেখাপড়া করব, ততক্ষণই ইবাদতে গণ্য হবে। বিসমিল্লাহ বলে স্কুলে যাত্রা শুরু করলে আল্লাহ তায়ালা আমাদের রাস্তার বিপদাপদ থেকে রক্ষা করবেন ।

কোনো অন্ধ লোককে রাস্তা পার হতে সাহায্য করলে আল্লাহর নিকট এর পুরস্কার পাওয়া যাবে, এটিও ইবাদত। রাস্তার ময়লা, আবর্জনা বা কষ্টদায়ক কোনো বস্তু অপসারণ করাও গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত।

সৎপথে ব্যবসা-বাণিজ্য করা, চাষাবাদ এবং অন্য কোনো সৎ পেশায় নিয়োজিত হয়ে যথাযথ কর্তব্য পালন করাও ইবাদতের মধ্যে শামিল। এমনকি ঘুমানোর আগে পাক-পবিত্র হয়ে আল্লাহর নাম নিয়ে ঘুমালে নিদ্রার সময়টুকুও আল্লাহর ইবাদতের মধ্যে গণ্য। এভাবে আমরা সর্বক্ষণই আল্লাহর ইবাদতে মশগুল থাকতে পারি ৷

ইবাদতে আল্লাহ তায়ালা খুশি হন। এতে দুনিয়ার জীবন সুখের হয়। পরকালে পরম শান্তিময় স্থান জান্নাত লাভ করা যায়। আর যারা ইবাদত করে না, আল্লাহর পথে চলে না, আল্লাহ তাদের প্রতি অসন্তুষ্ট হন। তারা দুনিয়াতে শান্তি পায় না। পরকালে তাদের জাহান্নামের কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হবে।

আমরা আন্তরিকতার সাথে ইবাদত পালন করব। আমাদের জীবন সর্বক্ষণই যাতে আল্লাহর ইবাদতে গণ্য হয় সে চেষ্টা অব্যাহত রাখব ।

Content added By
Promotion
NEW SATT AI এখন আপনাকে সাহায্য করতে পারে।

Are you sure to start over?

Loading...